বাংলা টেলিভিশনের অতি পরিচিত নাম জিতু কমল। ইন্ডাস্ট্রিতে ১৫ বছর কাটিয়ে ফেলেছেন জিতু। গত বছর অনীক দত্তর ‘অপরাজিত’ ছবিতে বাঙালির আইকন সত্যজিৎ রায়ের চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন জিতু। তারপর থেকে অন্যমাত্রা যোগ হয়েছে জিতুর স্টারডমে। এর মাঝেই ব্যক্তিগত জীবনে একটা বড় ঝড় বয়ে গিয়েছে অভিনেতার। নবনীতার সঙ্গে ডিভোর্সের জেরে সম্প্রতি চর্চায় থেকেছেন নায়ক। এবার পর্দায় জিতের প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি। সৌজন্যে, সঞ্জয় সামাদ্দার পরিচালিত ‘মানুষ’। ছবি নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে একান্ত আড্ডায় ধরা দিলেন জিতু কমল।
উৎসবের মরসুম কেমন কাটলো?
জিতু: আমি বাড়িতেই থাকি। এটা আমার ছোটবেলার স্বভাব। এবারও সেভাবে কেটেছে। আমার পুরোনো বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গেই আমি সময় কাটাতে ভালোবাসি।
‘মানুষ’-এ জিতের বিপরীতে প্রধান খলনায়ক জিতু… ভিলেন বলা যাবে ‘মান্নান’কে?
জিতু: (শুধরে দিয়ে) না, আমি এই ছবির খলনায়ক নই। এ কোনও অ্য়ান্টাগনিস্টও নয়, দুই হিরোকে নিয়ে তৈরি ছবি। মান্নান হল গ্রে-শেডের একটা চরিত্র। এইটুকু বলব মান্নান ছাড়া ‘মানুষ’ ছবিটা সম্পূর্ণ হবে না। মান্নান এই ছবির সূত্রটা গাঁথে। ওর চরিত্রে সবরকম শেড এখানে ধরা পড়বে।
জিৎ-এর মতো সুপারস্টারের সঙ্গে একফ্রমে, কেমন অভিজ্ঞতা?
জিতু: আমি ফ্লোর নিজে যখন কাজ করি, আমার দৃষ্টিভঙ্গি হল আমি একজন অভিনেতার সঙ্গে কাজ করছি। আমি সৌভাগ্যবান যে আমাকে কোনও ভনিতা করতে হয়নি যে আমি স্টারের সঙ্গে কাজ করছি। জিতদাও কোনওরকম দেখনদারি করেননি। আমরা সহকর্মী হিসাবে কাজ করেছি।
অপরাজিত-র পর পর্দা থেকে লম্বা বিরতি, সচেতন সিদ্ধান্ত?
জিতু: আমি চেয়েছিলাম অপরাজিত-র পর এমন কিছু রিলিজ করুক যেটা একদম ভিন্ন মেরুর চরিত্র হবে। আমি আরও একটা ছবি করছি, অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ বলে। সেটা একটা ডিটেক্টিভ গল্প, অরণ্যের দিনরাত্রি রয়েছে। আরেকটা পুরোদস্তুর কমার্শিয়াল মশালা ফিল্ম রয়েছে। আমি খুব লাকি, অপরাজিত-র পর মানুষ রিলিজ করছে।
সুপারস্টার জিৎ-কে টেক্কা দেওয়ার জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করলেন?
আমি কখনও ভাবিনি কাউকে টেক্কা দিতে হবে বা প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। স্টার তৈরি করে দর্শক। তাঁরা মনে করেছে অপরাজিত দেখে আমাকে ভালোবাসা দেবে। এই ছবিতে দর্শক আমাকে অন্য়ভাবে দেখবে। আমার কাছে গল্পটা জরুরি, আমি কার সঙ্গে কাজ করছি সেটা নয়।
সৃজিতের পদাতিক-এ ফের সত্যজিৎ-এর ভূমিকায়। একটি দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে, আপনার ভয়েস নিয়ে কটূক্তি চলছে। বিষয়টা কেমনভাবে দেখছেন?
জিতু: আমি নিজে সেই ভিডিয়ো দেখিনি। সৃজিতদা অনেকবার আমাকে বলায় আমি ওই চরিত্রটা করেছি, হাসানদার সম্মান রাখতে আমি করেছি। আমি প্রথমে করতে রাজিই হয়নি। সেই ক্লিপ দেখেনি, বিশেষ কিছু কানেও আসেনি। যতক্ষণ না সেটা দেখছি সেই ব্যাপারে মন্তব্য করা উচিত হবে না।
মানুষ জিতু কমল কতটা বদলালো তারকা হওয়ার পর?
জিতু: প্রত্যেকদিন যখন ঘুম থেকে উঠি নিজের মধ্য়ে পরিবর্তন লক্ষ্য করি। অপরাজিত-র আগেও নিজেকে ভাঙাগড়া প্র্যাক্টিস করতাম। তারপর অনেক মানুষ আমার জীবনে এসেছে, যারা আমাকে আরও ভালো অভিনেতা হয়ে উঠতে সাহায্য করছে। অনীকদা (দত্ত, পরিচালক) রয়েছে, উৎসবদা রয়েছে, জাতীয় পুরস্কার জয়ী সুপ্রতিম ভর (সিনেমাটোগ্রাফার) রয়েছে।
আমি কাজ থাকলে ৫০ পাতা, কাজ না থাকলে ২০০-২৫০ পাতা বই পড়ি প্রতিদিন। এই অভ্যেসটা আমার মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে বলেই আনতে পেরেছি।
জিতু তো লেখালেখি করে, ভবিষ্যতে পরিচালনায় আসার ইচ্ছে রয়েছে?
জিতু: আমি তো এসেইছিলাম পরিচালক হতে। আমি কেরিয়ার শুরু করি সহকারী পরিচালক হিসাবে। প্রয়াত দেবীদাস হালদারের সহকারী হিসাবে কাজ করেছি। অনিন্দ্যদার (সরকার) অবজারভার হিসাবে কাজ করেছি। যদি কোনওদিন সেই যোগ্যতা অবধি যেতে পারি, তাহলে নিশ্চয় পরিচালনা করব।
টেলিভিশন আর সিনেমায় অভিনয়ের মধ্যে কোনও ফারাক নজরে এল?
জিতু: অভিনয় তো অভিনয়ও। দৃষ্টিকোণ ভুল হতে পারে। চেঞ্জ কিছু নয়, আমি পরিচালকের অভিনেতা। পরিচালক আমাকে কীভাবে চালনা করছে সবটাই তার উপর নির্ভরশীল। সেটা বদলেছে। টেলিভিশনে এমন অনেক পরিচালক রয়েছে, যাঁরা অনায়াসে ভালো ছবি পরিচালনা করতে পারবেন।
টেলিভিশনে ফেরার ইচ্ছে রয়েছে?
জিতু: এখনও প্রতিদিন আমার কাছে টেলিভিশনের অফার আসে। কিন্তু আমি স্ক্রিপ্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। তাছাড়া এখন আমার অনেকগুলো ছবির কমিটমেন্ট রয়েছ। আমি যখন আগে টেলিভিশন করেছি, সেইসময় আমার কাছে প্রচুর ছবির অফার এসেছে। কিন্তু ওই কমিটমেন্টের জন্য় আমি করতে পারিনি। তখন সিরিয়াল ছেড়ে সিনেমা করা সম্ভবপর ছিল না, আমাকে একটা নির্দিষ্ট জিনিসে মন দিতে হবে।
গত কয়েকমাসে ব্যক্তিগত জীবনের ওঠাপড়া জিতু কমলকে কতখানি প্রভাবিত করে?
জিতু: আমি মনে করি মানুষের জীবনে উত্থান-পতন, হেরে যাওয়া-জিতে যাওয়া, খারাপ লাগা, ভালো লাগা যদি না থাকে, তাহলে জীবনটা বেরঙিন হবে। আমি কালাফুল মানুষ হতে চাই। শুধু ড্রেস পরে নয়, মনের দিক থেকে। আমরা অনেক সময় স্যাড সং শুনতে ভালোবাসি, কারণ তখন আমরা দুঃখিত হতে চাই। তোমাকে মনের খিদে মেটাতে হবে, আমি কালারফুল থাকতে চাই। আমার কাছে কালারফুলের সংজ্ঞা একদম আলাদা। শুধু আনন্দ দিয়ে কালারফুল হওয়া যায় না। তাতে সুখ-দুঃখ, হিট-ফ্লপ, হাসি-কান্না সবটা থাকবে। তাহলেই আমি কালারফুল হব।
এখনও প্রেমে বিশ্বাস করেন?
জিতু: হ্যাঁ, প্রেম প্রত্যেক দিন তো (রয়েছে)। আমি কথা বলছি আমার কথার প্রতি প্রেম করছে, ক্যামেরার প্রতি প্রেম রয়েছে, ফ্লোরের প্রতি প্রেম করেছে। নিঃসন্দেহে প্রেম-ভালোবাসায় আমি বিশ্বাস করি।
কেমন মানুষ জিতু অপছন্দ করে?
জিতু: আমি প্রত্যেকটা মানুষকে পছন্দ করি। মানুষকে অবিশ্বাস করা সবথেকে বড় পাপ। সৎ এবং সত্যবাদী মানুষ আমার পছন্দের। কিন্তু মিথ্যাবাদীদের আমি পছন্দ করি না। কেউ সত্যিটা গোপন করল সেটা আলাদা, কিন্তু মিথ্যে বালাটা আমি সহ্য করতে পারি না।