নজরুল ইসলামের গান নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছেন এ আর রহমান। ‘কারার ওই লৌহ কপাট’-এর মতো দেশাত্মবোধক গানের সুর বিকৃতি কাণ্ডে গত কয়েকদিন ধরেই হইচই দুই বাংলায়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তৈরি পিপ্পা ছবির গানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে দুই বাংলার সঙ্গীত শিল্পী তথা সঙ্গীত প্রেমীরা।
চাপের মুখে পরে অবশেষে ক্ষমা চাইল টিম পিপ্পা। কিন্তু গান বিকৃতি কাণ্ডে দায়সারা ভাবে ক্ষমা চেয়েই বিতর্ককে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করল প্রযোজনা সংস্থা। এদিন প্রযোজনা সংস্থা রয় কাপুর ফিল্মসের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। প্রযোজনা সংস্থার দাবি, কপিরাইট সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়ম-বিধি মেনেই কাজ করা হয়েছে, অনুমতি নিয়েই এই গান রিমেক করেছেন তাঁরা। নজরুল ইসলামের উত্তরসূরীরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন পিপ্পা টিমের সঙ্গ। তাঁরা জানায়, প্রয়াত কল্যাণী কাজী (নজরুল ইসলামের পুত্রবধূ) তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করেন, তার সাক্ষী অনির্বাণ কাজী। জানানো হয়, কাজী নজরুল ইসলামের লেখা অপরিবর্তিত রেখে নতুন সুর দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেখানে।
তবে নজরুল ইসলামের সুরারোপিত গানের প্রতি দুই বাংলার যে আত্মিক টান রয়েছে তা স্বীকার করে নিয়ে প্রযোজনা সংস্থার বক্তব্য, কারুর ভাবাবেগে আঘাত লেগে থাকলে তাঁরা ক্ষমাপ্রার্থী।
বিবৃতিতে স্পষ্ট লেখা হয়েছে, ‘কাজী নজরুল ইসলামের আসল সুরের প্রতি আমাদের অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে সঙ্গীত জগতে, সমাজ ও রাজনীতিতে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অনস্বীকার্য। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বাধীনতা, শান্তি ও ন্যায়ের জন্য যাঁরা সংগ্রাম করেছিলেন, তাঁদের কুর্নিশ জানাতেই এই অ্যালবাম তৈরি হয়েছে’।
তাঁরা আরও জানায়, ‘আমরা প্রয়াত কল্যাণী কাজীর কাছে অনুমতি চেয়েছিলাম এই গানের কথা এবং স্পিরিট অক্ষুন্ন রেখে বিশ্বস্তভাবে সেটি নির্মাণ করার। তার চুক্তিও হয়েছিল। সই করেছিলেন প্রয়াত কল্যাণী কাজী, সাক্ষী ছিলেন অনির্বাণ কাজী (কল্যাণী দেবীর পুত্র)।
শেষে পিপ্পা-র নির্মাতার জানান, ‘অরিজিন্যাল কম্পোজিশনের প্রতি দর্শকদের যে আত্মিক টান রয়েছে সেটা আমরা বুঝতে পেরেছি,তবে শিল্প সর্বদাই ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার বিষয়। তবে আমাদের কাজ যদি কারুর ভাবাবেগে আঘাত দেয় কিংবা কোনও সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে তাহলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী’।
অনির্বাণ কাজী আগেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন চুক্তি করেই তাঁর মা এই গান ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। তবে গান অবিবৃত রাখার কথা নির্মাতারা জানিয়েছিলেন, এমনকী গান রেকর্ড করার পর তা শোনানোর কথাও কল্যাণী দেবী জানিয়েছিলেন। কিন্তু কল্যাণী দেবীর মৃত্যুর পর এই বিষয়টি আর মাথায় ছিল না তাঁর।