গত কয়েকদিন ধরেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এ আর রহমান। দুই বাংলায় অস্কারজয়ী সঙ্গীত পরিচালককে নিয়ে নিন্দার ঝড়। নেপথ্যে পিপ্পা ছবিতে ব্যবহৃত ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটি। নজরুলর সুরারোপিত এই গানকে বিকৃ করেছেন রহমান, অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। ক্ষোভে ফুঁসছে বাঙালি সমাজ।
আশ্চর্যজনকভাবে রহমানের গানের ক্রেডিটে কেবল গীতিকার হিসাবেই উল্লেখ করা হয়েছে নজরুলের নাম। সুরকার হিসাবে যাবতীয় ক্রেডিট নিয়েছেন রহমান নিজেই। রহমান-সহ পিপ্পা ছবির নির্মাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ডাক দিচ্ছেন অনেকেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন নজরুলের নাতনি মিষ্টি কাজী। জানা গিয়েছে পিপ্পা ছবির নির্মাতাদের এই গান ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন নজরুলের ছোট বউমা, প্রয়াত কল্যাণী কাজী।
২০২১ সালে, মৃত্যুর মাস কয়েক আগেই নজরুলের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী রহমানকে এই গান ব্যবহারের অনুমতি দেন। গোটা বিষয় নিয়ে এবার সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলেছেন কবির পৌত্রী অনিন্দিতা কাজী। কল্যাণী কাজীর মেয়ে স্পষ্ট জানান, তাঁর প্রয়াত মা অবিকৃত রেখে এই গান ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। গানের স্বস্ত্ব হস্তান্তর নিয়ে প্রশ্ন তুলে তা প্রকাশ্যে আনার দাবি জানান অনিন্দিতা।
এখন আমেরিকার নিউ জার্সিতে থাকেন অনিন্দিতা। ফেসবুকের দেওয়ালে শিল্পী লেখেন, ‘আমি অনিন্দিতা কাজী ,কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি। দাদুর ‘কারার ওই লৌহ কপাট’ গানটির সুরবিকৃতি ঘটিয়েছেন বিশিষ্ট গীতিকার সুরকার শিল্পী এ আর রহমান। গোটা বিশ্ব জুড়ে বিতর্কের ঝড়, তোলপাড়। আমার মা কল্যাণী কাজী, যাঁর বেঁচে থাকাই ছিল নজরুলকে নিয়ে, নজরুলকে ঘিরে, নজরুলকে তিনি ধারণ করেছিলেন… তিনি ২০২১ সালে গানটি অবিকৃত রেখে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছিলেন বলে জানতে পারি। কিন্তু এর পরিণতি এমন হবে, তিনি মৃত্যুর পরেও ভাবতে পারেননি বোধ হয়।’
সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই অভিযোগ করছেন, অনেক টাকা নিয়ে পরিবার এই গানের স্বস্ত্ব বিক্রি করেছে। সেই প্রসঙ্গে অনন্দিতা স্পষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি। তিনি জানান, ‘সে ক্ষেত্রে ২০২১ সালে কী এগ্রিমেন্ট হয়েছিল সেটা জানা খুব প্রয়োজন, তা হলে সব বিতর্কের অবসান হবে। এবং যাঁরা এগ্রিমেন্ট-এর বিপক্ষে গিয়ে এই কাজটি করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।’ অনিন্দিতা আরও লেখেন মিডিয়ার মাধ্যমেই তিনি জানতে পেরেছেন ওই চুক্তির প্রতিলিপি তাঁর ভাই অনির্বাণ কাজীর কাছে রয়েছে। সেটি প্রকাশ্যে আনার অনুরোধ জানান তিনি।
নজরুলপুত্র অনিরুদ্ধ কাজীর ছেলে কাজী অনির্বাণ আগেই জানিয়েছেন, কল্যাণী কাজী গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও তিনি গানটি রেকর্ডের পর শুনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই গানটি তাঁর পরিবারকে শোনানো হয়নি, তাঁদের অন্ধকারে রেখেই গানটি প্রকাশ্যে আনা হয়।