তুমি তো হ্যাংঝাউয়ে এসে গিয়েছ। তুমি তো ফিট? ব্যস! তাহলে মাঠে নেমে পড় – এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে কার্যত এরকমই অবস্থা হয়েছে ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ ইগর স্টিম্যাচের। কারণ ভারতীয় ফুটবলের ‘ভালো’ চাওয়া একাংশের চূড়ান্ত অপদার্থতায় তাঁর হাতে পর্যাপ্ত সংখ্যক খেলোয়াড় নেই। যে খেলোয়াড়রা আছেন, তাঁরাও ক্লান্তিতে ভুগছেন। ঠিকমতো বিশ্রাম না পাওয়ায় চিনের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে ৭০ মিনিটের পর থেকে তাঁরা খেলা থেকে হারিয়ে যান। ক্র্যাম্প ধরে যায় একাধিক খেলোয়াড়ের। তার জেরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন সুমিত রাঠি, লালচুংনুঙ্গা এবং আবদুল রাবি। স্টিম্যাচের আশঙ্কা, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওই তিনজনকে নামালে বড় চোটের ঝুঁকি থাকবে। আর যে তিনজন খেলোয়াড় হ্যাংঝাউয়ে আসছেন, তাঁরাও ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগেই আসছেন। ফলে তাড়াহুড়ো করে নামিয়ে দিলে তাঁদেরও একই পরিণতির আশঙ্কা আছে। আর একজন খেলোয়াড় আদৌও আসবেন কিনা, তা নিয়েও ধন্দে আছেন স্টিম্যাচ।
মঙ্গলবার চিনের বিরুদ্ধে ৫-১ গোলে হারের পর হ্যাংঝাউ থেকে ফোনে ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-কে স্টিম্যাচ বলেন, ‘আমরা মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়েছি। তিন খেলোয়াড়ের (রাঠি, লালচুংনুঙ্গা এবং আবদুল) ক্র্য়াম্প হয়েছে। সেভাবেই যদি ওরা বৃহস্পতিবার খেলে, তাহলে বড় চোট লাগার ঝুঁকি আছে। আর বৃহস্পতিবার ম্যাচের কয়েক ঘণ্টা আগে তিনজন খেলোয়াড় (হ্যাংঝাউয়ে) পৌঁছাতে পারে।’
স্টিম্যাচ জানিয়েছেন, নিজেদের দলের হয়ে এশিয়ার ক্লাব প্রতিযোগিতায় খেলে তিন খেলোয়াড় (গুরকিরাত সিং, নরেন্দর গেহলট এবং অনিকেত যাদব) হ্যাংঝাউয়ে আসছেন। চতুর্থ খেলোয়াড় দীপক টাংরি আদৌও আসবেন কিনা, সে বিষয়ে কোনও নিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছেন স্টিম্যাচ। তিনি জানিয়েছেন, মোহনবাগান সুপার জায়ান্টের দীপক যদি না হ্যাংঝাউয়ে যেতে পারেন, তাহলে জিকসন সিংয়ের যাওয়ার কথা আছে। কিন্তু কেরল ব্লাস্টার্স তাঁকে ছাড়বে কিনা, সে বিষয়ে তাঁর কাছে কোনও নিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছেন স্টিম্যাচ।
আর দীপক যদি যেতে না পারেন এবং জিকসনকে যদি ব্লাস্টার্স না ছাড়ে, তাহলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচের জন্য ভারতের স্কোয়াডে খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ২১। তাতে অতিরিক্ত দু’জন গোলকিপার থাকবেন। আর সঙ্গে তিন খেলোয়াড়ের ক্র্যাম্প আছে। অর্থাৎ খাতায়কলমে ১৬ জন খেলোয়াড়কে হাতে পাবেন স্টিম্যাচ। আর কারও যদি ম্যাচের আগে চোট লেগে যায় বা অসুস্থতা হয়, তাহলে কী হবে ভেবেই শিউরে উঠছে সংশ্লিষ্ট মহল। অনেকের কটাক্ষ, এবার তাহলে কোচিং ছেড়ে মাঠে নামতে হবে স্টিম্যাচকে।
যদিও তাতে ভারতীয় ফুটবলের ‘ভালো’ চাওয়া একাংশের জ্ঞান ফিরবে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আর জ্ঞান ফিরলেও তাঁদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। কারণ এক বছর আগে এশিয়ান গেমসের সূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তারপর থেকে ওই মহল শীতঘুম দিচ্ছিল কিনা, সেই প্রশ্ন থাকছে। ফিফা উইন্ডোয় এশিয়ান গেমস না হওয়ায় ক্লাবগুলি যে খেলোয়াড় ছাড়তে রাজি হবে না, সেই সমস্যা কি আগে থেকে অনুধাবন করা যায়নি? সেইমতো ঘরোয়া লিগের সূচির হেরফের করা যায়নি? নাকি পুরোটাই হালকা চালে নেওয়া হয়েছিল?
আরও পড়ুন: Asian Games 2023: প্রবল গতিতে চিনকে মাটিতে ফেলে ‘সোলো রান’-এ দুর্ধর্ষ বল রাহুলের! রইল সেই ভিডিয়ো
তবে ভারতীয় ফুটবলের ‘ভালো’ চাওয়া একাংশের অপদার্থতা সেখানেই শেষ হয়নি। কারণ একটা বড় প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচের ২১ ঘণ্টা আগে ভেন্যুতে টিম পৌঁছাচ্ছে। অনুশীলন ছাড়াই প্রথম ম্যাচে নামছে দল। সেটার পরিণতি যে কী হতে পারে, সেটা চিনের বিরুদ্ধে হাড়ে-হাড়ে টের পাওয়া গিয়েছে। অনুশীলন ছাড়াই মাঠে নামলে একটা দলের যা হতে পারে, ঠিক সেটাই হচ্ছিল প্রথম ২০ মিনিটে। তারপর ভারত খেলায় ফিরলেও বিশ্রাম না পাওয়া খেলোয়াড়রা শেষের দিকে আর টানতে পারছিলেন না।
ম্যাচের পর স্টিম্যাচের গলায় সেই হতাশা ফুটে উঠেছে। ভারতীয় ফুটবল দলের কোচ বলেন, ‘আমার খেলোয়াড়দের নিয়ে গর্বিত আমি। ৭২ মিনিট পর্যন্ত যা হয়েছে, সেটা দিয়ে ওদের বিবেচনা করুন। তারপর যেটা হয়েছে, সেটা ওদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।’
আরও পড়ুন: IND vs CHN Asian Games Highlights: এশিয়াডের শুরুতে ৫-১ গোলে হার ভারতের, দায় এড়াতে পারবে ‘ভালো চাওয়া’ লোকদের একাংশ?