স্বপ্ন দেখতে দেখতে হাল ছেড়ে দিলেই মুশকিল। লেগে থাকতে হয়। তাহলে হয়তো কোনও না কোনওদিন স্বপ্নকে ছোঁয়া যায়। বীরভূমের ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে কলকাতা, একের পর এক ভাঙা-গড়া, চড়াই-উৎরাই পার করে সাফল্যের প্রথম সিঁড়িতে পা। পুজোতে মুক্তি পাচ্ছে ‘বাঘাযতীন’। বড়পর্দা, বড়-ছবি এবং সর্বোপরি দেব-এর সঙ্গে স্ক্রিনশেয়ার। কেমন ছিল সেই সফরনামা নিউজ ১৮ বাংলার সঙ্গে ভাগ করেনিলেন অভিনেতা অনির্বাণ পৈতন্ডী
বড়পর্দায় বড় কাজ কি এটাই প্রথম?
– না। প্রথম কাজ দেব এইন্টারটেইনমেন্ট ভেঞ্চার্সেরই। অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘হবুচন্দ্র রাজা গবুচন্দ্র মন্ত্রী’। তখনও বিষয়টা নিয়ে খুবই উত্তেজিত ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোভিডের জন্য তখন ছবিটা প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি। টিভি রিলিজ হয়েছিল। তারপরে আরও একটি ছবি করেছিলাম। অরিত্র মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘ফাটাফাটি’। সেখানে ছোট একটি চরিত্র করেছিলাম। কিন্তু সেটাও বেশ মজার চরিত্র ছিল। তারপরে ‘বাঘাযতীন’।
পুজোয় সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে, সেটা কি একটা বাড়তি একটা আনন্দ?
-সেটা তো অবশ্যই। একে ‘বাঘাযতীন’ তার উপর দেব। ফলে ছবিটা এমনিই একটা ম্যাজিক। তার উপর ছবিটা যেহেতু পুজোতে মুক্তি পাচ্ছে, ফলে বাড়তি একটা পাওনা তো থাকেই। কারণ ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে কোনও ছবিই পুজোয় অনেক বেশি দর্শক টানে। সাধারণ সময়ের থেকে পুজোর কিছু উপরি লাভ তো থাকেই, সেটা ব্যবসার ক্ষেত্রে হোক বা শুধুই মনোরঞ্জনের ক্ষেত্রে।
প্রথম যখন অফার এল তখন কেমন লেগেছিল? এত বড় একটা ব্রেক, সেই অনুভূতিটা নিশ্চয়ই আলাদা?
– বাঘাযতীনের অফার প্রথম যখন পাই, সেই সময়ে আমি একটা ধারাবাহিক করছি। শুরু থেকেই বিষয়টা খুব মসৃণ ছিল না। তবে ঈশ্বর হোক বা নিয়তি, দুটোই আমার সঙ্গে ছিল। বাঘাযতীনে ক্লিনশেভড লুক লাগত। এদিকে ধারাবাহিকের চরিত্র অনুযায়ী আমার মুখে তখন দাড়ি। সেটা কাটাও সমস্যার কারণ ধারাবাহিকের চরিত্রের প্রয়োজনে তখন দাড়িটা রাখতেই হবে, কারণ সেটা কন্টিনিউইটি লুক। তখন রূপসজ্জা শিল্পী থেকে শুরু করে সমগ্র বাঘাযতীন টিম তখন যতটা সম্ভব আমাকে সাহায্য করেছিল। সেই বিষয়টাও ম্যানেজ হয়ে যায়। কিন্তু বাধা তো এত সহজে কাটার নয়। এবার আরও বড় বিপদ। আগের একমাস ধরে বেশ অসুস্থ ছিলাম। শ্যুটিংয়ের ঠিক আগের দিন এমআরআই রিপোর্ট এল। সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালের ডাক্তাররাই জানিয়েছিলেন শরীরের যা পরিস্থিতি এই অবস্থায় শ্যুটিং করলে ডান হাত অকেজোও হয়ে যেতে পারে। কথা বললাম দেবদা এবং অরুণদা (পরিচালক অরুণ রায়)-এর সঙ্গে। তাঁরা দুজনেই সেই সময়ে শরীরকেই গুরুত্ব দিতে বলেছিলেন। কোথাও দেবদার সঙ্গে কাজ করার অদম্য একটা জেদ ছিল। কিন্তু কিছু মুহূর্তের জন্য হাল ছেড়ে দিলেও আচমকাই ঠিক করলাম যাই হয়ে যাক, ছবিটা আমি করবই। করলামও। এখনও পর্যন্ত ডান হাত কিন্তু অক্ষতই আছে। (হাসি)
প্রথম থেকেই কি অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল? অভিনয়ে আসার গল্পটা একটু শুনব…
-প্রথম থেকে অভিনয় করারই ইচ্ছা ছিল। উচ্চ মাধ্যমিকের পর থেকেই অভিনয় শুরু করি। অঙ্কে অনার্স পড়ছিলাম। ঘটনাচক্রে পরীক্ষার দিনই নাটকের শো পড়ে। তখন আমি সিউড়ির একটি দল ইয়ং নাট্য সংস্থায় অভিনয় করি। পরীক্ষা দিতে না গিয়ে শো করি। শো-টাও বেশ ভালই হয়। স্বাভাবিকভাবেই স্নাতকের পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। এরপর কলকাতায় আসা। থিয়েটারে অভিনয় তখনও চলছে। এবার বাংলায় অনার্স পড়া শুরু করি কলকাতারই একটি কলেজে। প্রথম শ্রেণিতেই উত্তীর্ণ হই। তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একদিকে স্নাতকোত্তর, পাশাপাশি চুটিয়ে থিয়েটার। মিনার্ভা রেপার্টরিতে অভিনয় করেছি, তারপর ব্রাত্য বসুর তত্ত্বাবধানে নাটক। এই জার্নিটাও ভালই ছিল। পাশাপাশি স্নাতকোত্তরও শেষ করি। এমনও দিন গিয়েছে তিনদিন না খেয়ে কাটিয়েছি কিন্তু অভিনয় ছাড়ার কথা ভাবতে পারিনি কখনও।
দেবের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?
– প্রথমে যদি প্রোডিউসার দেবের কথা বলি, তাহলে বলতে হয় তিনি নিজে অভিনেতা বলেই হয়তো বাকি অভিনেতাদের কমফোর্ট জোনটা এত ভাল বোঝেন। এবার আসি অভিনেতা দেবের প্রসঙ্গে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে হয়তো তাঁর অভিনয় নিয়ে কথা বলাটা আমার ক্ষেত্রে ধৃষ্টতাই হবে। তবু বলব দেবদার মতো সহ অভিনেতা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যখন যেখানে অসুবিধা হয়েছে আমরা একাধিকবার রিহার্সাল করেছি। কখনও মনে হয়নি যে একজন এত বড় সুপারস্টারের সঙ্গে অভিনয় করছি।
বাঘাযতীনে কোন চরিত্রে দেখতে পাব?
– আমার চরিত্রটা নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্তের। যিনি বুড়িবালামের যুদ্ধে বাঘাযতীনের একজন সহযোদ্ধা ছিলেন। কিছুটা হলেও তাঁর জীবনটা ছুঁয়ে আসতে পেরেছি। এটাই বোধহয় সব থেকে বড় পাওনা।
টলিউডে আর কার সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে?
– কাজের তো এই সবে শুরু। তবু আলাদা করে যদি বলতেই হয় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, ঋত্বিক চক্রবর্তী, যীশু সেনগুপ্ত, চঞ্চল চৌধুরী এঁদের সকলের সঙ্গেই কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রাজ চক্রবর্তী, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত আমার খুব পছন্দের পরিচালক। তাই কখনও যদি তাঁদের পরিচালনায় কাজের সুযোগ আসে, তার থেকে বড় তো আর কিছু হতে পারে না।
পরবর্তী প্রজেক্ট আর কী আসছে?
-আপাতত ‘বাঘাযতীন’ তো আছেই। শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-নন্দিতা রায়ের পরিচালনায় ‘রক্তবীজ’ও আসছে। দুটোই পুজোতে মুক্তি পাবে। আরও কয়েকটা কাজের কথা চলছে। তবে সেগুলো ক্রমশ প্রকাশ্য। এছাড়া নিজের যে থিয়েটারের দল রয়েছে, ‘চারুচর্যা’, সেখানেও নতুন নাটকের পরিকল্পনা চলছে। দেখা যাক।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Durga Puja 2023, Tollywood Actor, Tollywood news