‘মহারাজ, এ কী সাজে…’ ফ্রেম-প্রেম, আবেগ-আলো-অ্যাকশনে ‘বাদশা জ়িন্দা হ্যায়’

Advertisement

কলকাতা: গোটা শহরের ঘুম ভাঙেনি তখনও। আধো-আলোতে, আধো ঘুম-চোখে হলমুখী হয়েছিলেন মানুষ। অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়া মানুষগুলোকে সেদিন আর ঘুম থেকে টেনে তুলতে হয়নি। শাহরুখ পেরেছিলেন। শাহরুখ পেরেছিলেন ৭ নভেম্বরের সকালে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রেক্ষাগৃহে নিয়ে যেতে। শহর-শহরতলি-গ্রামের আনাচ কানাচে একটা সুর। যেই সুরটা আপনি এখন গুনগুন করছেন, সেই শিসের আওয়াজই ঘুরছিল লাল-কালো সিটগুলোর কোণায় কোণায়। প্রেক্ষাগৃহে মুখ বাঁধা, ব্যান্ডেজ করা কতশত ভক্ত। এত উন্মাদনা কার জন্য? শুধুই অ্যাকশন? শুধুই রোম্যান্স? শুধুই কমেডি? নাকি স্বয়ং বাদশা?

তিনিই পারেন প্রেক্ষাগৃহকে স্টেডিয়াম বানাতে। শাহরুখ খানের অভিনয়, তাঁর উপস্থাপন গোটা ছবির মূল উপজীব্য। ২ ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে একটা মুহূর্ত তাঁর দিক থেকে চোখ সরাতে পারবেন না আপনি। ঠোঁট কামড়াবেন, চমকে উঠবেন, আপনার শিরদাঁড়া বেয়ে বয়ে যাবে শীতল কোনও স্রোত। কিছুক্ষণ পরেই উপলব্ধি করবেন প্রেক্ষাগৃহ স্টেডিয়াম হয়ে গিয়েছে অচিরেই। ছবিতে শাহরুখের যতগুলো ভূমিকা, লুক-ও ততগুলোই। প্রথমবার মুন্ডিতমস্তকেও হাজির হয়েছেন তিনি। তবে তাতেও শাহরুখ, শাহরুখই। নিজেকে কতভাবে ভেঙে কতভাবে গড়া যায়, আবারও প্রমাণ করে দিয়েছেন বাদশা। একটা নেতিবাচক চরিত্র যতটা নিষ্ঠুর হতে পারে বিজয় সেতুপতি ততটাই। শাহরুখকে যত ভালবাসবেন, ততই ঘৃণা করতে ইচ্ছা করবে এই লোকটাকে। ছবির মুখ্য মহিলা চরিত্র নয়নতারা। যিনি একদিকে দুঁদে পুলিশ অফিসার, অন্যদিকে মা। যাঁর মধ্যে দেখতে পাবেন তেজ আর স্নেহের অদ্ভুত মিশেল। কাটেনি। দক্ষিণী অভিনেত্রী হিসাবে বলিউডে প্রথম কাজ করলেও রকম জড়তা তাঁর মধ্যে নেই। ছোট অথচ বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে দীপিকা পাডুকোন অনবদ্য। চিফের গ্যাংও বেশ ভাল। যেই গ্যাংয়ে রয়েছেন সানায়া মালহোত্রা, সঞ্জিতা ভট্টাচার্য, প্রিয়মণি, লেহর খান। প্রাণ দিয়ে অভিনয় করেছেন ছোট পর্দার জনপ্রিয় ঋদ্ধি ডোকরা, অ্যাহেজাস খান। পরিচালক হিসাবে অ্যাটলি দশে দশ। সবরকম মশলা থাকলে একটা রান্না যতটা ভাল হতে পারে, তিনি ততটাই করে দেখিয়েছেন। তাতে দক্ষিণী ছোঁয়া থাকলেও তা এই সিনেমায় অনুঘটকের কাজই করেছে।

গল্পের শুরু হয় ট্রেন হাইজ্যাক দিয়ে। ট্রেনের ৩৭৬ যাত্রীর পরিবর্তে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান ‘আজাদ’। কে এই আজাদ? যে উচ্চবিত্ত, ক্ষমতার সিংহাসনে বসে থাকা মানুষগুলোর থেকে টাকা নিয়ে মকুব করে হাজার হাজার কৃষকের কৃষিঋণ। চুলচেরা বিশ্লেষণে স্পষ্ট করে দেয় দুই বিত্তের, দুই সম্প্রদায়ের পার্থক্য। পর্দাজুড়ে ঘুরতে থাকে আরেকটা নাম… বিক্রম রাথোড়! সামনে আসে দুটো প্রেক্ষপট। যা স্পষ্ট করে দেয় একবিংশ শতাব্দীর ঘুণ ধরা সমাজের নগ্ন রূপ। গণতন্ত্রিক কাঠামোকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়। আঙুল তুলতে বাধ্য করে, ‘রাজা তোর কাপড় কোথায়?’

আরও পড়ুন: ৫৭-তেও কীভাবে ‘জওয়ান’ শাহরুখ? ফাঁস হল বাদশার ফিটনেস রহস্য

তাহলে ত্রুটি? জওয়ান গান গড়পড়তা। আহামরি মিউজিক অ্যলবাম এখানে নেই। ছবির শুরু নারীর দাপট, তার ক্ষমতা দিয়ে। শাহরুখের গ্যাংয়ের মূল কাণ্ডারী এই মহিলারাই। তবে শেষের দিকে যেন বাদশা একাই বাজিমাত করেছেন। কোথাও গিয়ে কিছুটা কমে গিয়েছে সেই নারী শক্তির দাপট। কিছু দৃশ্য খানিকটা অবাস্তব লাগবে ঠিকই, তবে তা খুবই সামান্য। অ্যাকশান সিনেমার হিরোদের ক্ষেত্রে এটুকু অবাস্তবতা মাফ করে দেওয়া যেেতে পারে। আর তা যদি হয় শাহরুখ, তা হলে তো কথাই নেই।

শুরুতে একটু ঘেঁটে আপনিও যাবেন। কে নায়ক? কেই বা খলনায়ক? বলতে ইচ্ছে হবে, ‘এত রক্ত কেন?’ এই ‘কেন’র উত্তর পেতে খুব বেশি সময় আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে না। এক একটা ধাপে খুলবে গল্পের এক একটা স্তর। আর প্রত্যেকবার অবাক হবেন আপনি। তার সঙ্গে আরও একটা প্রশ্ন আসবে আপনার মাথায়, লোকটা কে? এর উত্তর দিয়েছেন শাহরুখ নিজেই। ‘ম্যায় কউন হুঁ, কউন নেহি, পতা নেহি। মা কো কিয়া ওয়াদা হুঁ, ইয়া অধুরা এক ইরাদা হুঁ, ম্যায় আচ্ছা হুঁ, বুড়া হুঁ, পুন্য হুঁ ইয়া পাপ হুঁ…’ এই আজাদ বা বিক্রম রাথোড় তাহলে কে? আমি? আপনি? নাকি প্রতিটা নাগরিক  যারা কর দেয়, ভোট দেয়, সরকার নির্বাচন করে? উত্তর দিয়েছেন স্বয়ং বাদশাই, ‘ইয়ে খুদ সে পুছনা, কিউকি ম্য়ায় আপ হুঁ।’

Published by:Rachana Majumder

First published:

Tags: Jawan

Advertisement

Malek

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।