বাংলা ছবির স্বর্ণযুগের পরিচিত নাম অমরনাথ মুখোপাধ্যায়। নিঃশব্দে চলে গেলেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। শুক্রবার সকালে প্রিয় ‘অমরনাথকাকু’র মৃত্যু সংবাদ প্রথম জানান অভিনেতা জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে আর্টিস্ট ফোরামের তরফ থেকে ‘মৌচাক’, ‘বসন্ত বিলাপ’ খ্যাত অভিনেতার মৃত্যু সংবাদ জানিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয়।
অমরনাথ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ সিনেমাপ্রেমী মানুষজন। উত্তম কুমার, রঞ্জিত মল্লিক অভিনীত ‘মৌচাক’ ছবিতে স্বল্প উপস্থিতিতেই নজর কেড়েছিলেন ‘ডঃ গুপ্ত’ অমরনাথ মুখোপাধ্যায়। তাঁর মুখের সংলাপ, ‘ওতে যৌবনের মজাটা আছে, কিন্তু বংশবৃদ্ধির সাজাটা নেই’, আজও ভুলতে পারেনি দর্শক। কিন্তু গত কয়েক দশক ধরে প্রচারের একদম অন্তরালেই ছিলেন অভিনেতা। আর আড়ালেই হারিয়ে গেলেন তিনি। ২০০৫ সাল থেকে পাকাপাকিভাবে ছেলের কাছে মুম্বইয়ে থাকতেন প্রবীণ অভিনেতা
গত ২৫শে মে (বৃহস্পতিবার) মুম্বইয়ে পরলোক গমন করেন নবতিপর শিল্পী। বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন অমরনাথ মুখোপাধ্যায়, অবশেষে বাড়িতেই ঘুমের মধ্যে প্রয়াত হন শিল্পী। রেখে গেলেন স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতিকে।
১৯৩৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম অমরনাথবাবুর। অভিনয়ের জগতেই বড় হয়ে ওঠা তাঁর, ছোট থেকেই তাই অভিনয়ের প্রতি ঝোঁক তৈরি হয়েছিল। তাঁর বাবা ছিলেন হরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, অমরনাথের বিখ্যাত অভিনেতা জহর গঙ্গোপাধ্যায়। যৌবন পা দিতে না দিতেই তরুণ কুমার, রবি ঘোষ, জোছন দস্তিদারের সঙ্গে নাটকের দলে কাজ শুরু করেন। ‘দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন’ ছবিতে অভিনয়ের সঙ্গে রুপোলি পর্দায় জার্নি শুরু তাঁর। ‘হার মানা হার’ ছবিতে সুচিত্রা সেনের দাদার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন অমরনাথ মুখোপাধ্যায়। ‘মৌচাক’-এর পাশাপাশি ‘বসন্তবিলাপ’ ছবিতে তাঁর অভিনয় আইকনিক। অনুপ কুমারের দাদার রোলে ছিলেন তিনি।
এছাড়াও ‘ছিন্নপত্র’, ‘স্ত্রী’,‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’,’আলো’, ‘স্বয়ংসিদ্ধা’, ‘অগ্নীশ্বর’, ‘বিদ্রোহী’–র মতো ছবিতে নিজের অভিনয় প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। সেই অর্থে লিড হিরো হয়ে উঠতে না পারলেও পার্শ্ব চরিত্রে বরাবর নজর কেড়েছেন অমরনাথ মুখোপাধ্যায়। বাংলার পাশাপাশি সত্তর ও আশির দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন তিনি। শুরুটা হয়েছিল শক্তি সামন্তর ‘অমানুষ’-এর হিন্দি ভার্সন দিয়ে। পরবর্তীতে ‘ধন দৌলত’, ‘ধুঁওয়া’, ‘ডিস্কো ডান্সার-এর মতো ছবিতে কাজ করেছেন। অভিনয় করেছেন হিন্দি ও বাংলা সিরিয়ালেও। তাঁর শেষ উল্লেখযোগ্য কাজ তরুণ মজুমদারের ‘আলো’। এরপর ধীরে ধীরে অন্তরালে চলে যান তিনি। ইন্ডাস্ট্রির লোকজনও আর সেভাবে খোঁজ রাখেনি।
এদিন জয়জিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রয়াত অভিনেতাকে স্মরণ করে লেখেন, ‘অমরনাথ কাকু ভালো থেকো অন্য পৃথিবীতে। তোমার নম্বরটা থেকে যাক আমার মুঠোফোনে’। জয়জিৎ-এর পোস্টে শোকজ্ঞাপন করে অভিনেতা সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায় লেখেন, ‘ইস্! বসন্ত বিলাপে দাদার চরিত্রটা ভোলা যাবে না কোনোদিন। কি সুন্দর উচ্চারন।’ পরিচালক অনিন্দ্য সরকার লেখেন, ‘কাজ করেছি একসাথে অসম্ভব স্নেহ পেয়েছি ভালোবাসা পেয়েছি… প্রণাম জানাই তোমাকে’।