‘শ্মশান থেকে হাত ধরে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিলেন মৃণাল সেন!’ গীতা সেনকে লেখা সুরমা ঘটকের চিঠি প্রকাশ্যে

Advertisement

কলকাতা: মৃণাল সেন এবং ঋত্বিক ঘটক। এই দু’টি নাম মনে করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠতে থাকে, ‘পদাতিক, ‘একদিন প্রতিদিন, মৃগয়া, ভুবন সোম’ কিংবা ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘সুবর্ণরেখা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘অযান্ত্রিক’-এর মতো বহু কালজয়ী বাংলা সিনেমার কথা। বাংলা সিনেমা যারা ভালবাসেন তাঁরা জানেন, ঋত্বিক-মৃণালকে ছাড়া বাংলা সিনেমা কখনই কালজয়ী হতে পারত না। বাংলা সিনেমা বলতে যদি সবার আগে সত্যজিৎ রায়ের নাম আসে, তবে সেই সঙ্গে আসবে এই দুই কালজয়ী পরিচালকের নামও। ঋত্বিক ছিলেন খামখেয়ালি। অভাবের সঙ্গে লড়ে কীভাবে টিকে থেকে কালজয়ী হয়ে উঠতে হয় তা তিনি করা দেখিয়েছেন। তবে ঋত্বিক ঘটকের চলে যাওয়ার বড্ড তাড়া ছিল। নয়তো আজ তাঁর ঝুলিতে আরও অনেক সোনার গোলক থাকত। অন্যদিকে মৃণাল সেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কেবল জয়ের গল্পই গেঁথে গিয়েছেন। এই দুই ব্যক্তিত্বকে নিয়ে লিখতে যাওয়া এক প্রকার ধৃষ্টতা! কারণ তাঁদের উচ্চতা, মননশীলতা ছোঁয়া বা বোঝার ক্ষমতা আমাদের অনেকেরই নেই।

১৪ই মে ছিল মৃণাল সেনের জন্মশতবার্ষিকী! সিনেমা জগতের উজ্জবল তারকা হয়েই থেকে যাবেন তিনি। সম্প্রতি মৃণাল সেনের ছেলে কুণাল সেন সামাজিক মাধ্যমে এক আশ্চর্য দলিল তুলে ধরেছেন। মৃণাল ও ঋত্বিক এই দুইয়ের পারিবারিক সম্পর্ক বেশ ভাল ছিল। এমনকি তাঁদের স্ত্রীয়েদের মধ্যেও ছিল সুসম্পর্ক। ঋত্বিক ঘটক মারা যাওয়ার পর মৃণাল সেন এবং তাঁর স্ত্রী গীতা সেন ভীষণ ভাবে পাশে ছিলেন সুরমা ঘটকের। এমনকি ঋত্বিক চলে যাওয়ার পর তাঁর স্ত্রীকে নতুন করে লড়াই করার পথ এই দুই সেনই দেখিয়েছিলেন। আজ তাঁরা আর কেউ নেই। কিন্তু তাঁদের সৃষ্টি অমর হয়ে থেকে গিয়েছে। শুক্রবার নিজের পুরোনো জিনিস ঘাটতে গিয়ে তেমনই এক অমূল্যরতন হাতে পেলেন কুণাল সেন।

 

ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রী সুরমা ঘটকের লেখা একটি চিঠি। মৃণাল সেনের স্ত্রীকে লিখেছিলেন তিনি। এই চিঠি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে কুণাল লেখেন, “আমার মার একটা পুরোনো ব্যাগ ঘাঁটতে গিয়ে একটা ছেঁড়া চিঠি হাতে এলো। চিঠিটা ঋত্বিক ঘটকের স্ত্রী সুরমা ঘটকের লেখা, আমার মাকে। মা যত্ন করে নিজের ব্যাগে রেখে দিয়েছিলেন। ঠিক কবে লেখা আমার জানা নেই। ভাবলাম হয়তো অন্যদের দেখতে ভালো লাগবে।” এই চিঠি পড়লে ফের একবার ভাবের সাগরে ভাসতে হয় বইকী। এমনকী এই চিঠি প্রমাণ দেয় সহজ সরল মানুষের ভালবাসা ও মননের!

এই চিঠিতে সুরমা ঘটক লেখেন, “গীতা, আজ মৃণাল সেনের জন্মদিন। আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন মৃণালবাবুকে জানাচ্ছি। মৃণালবাবু একটা যুগের প্রতীক, একটা স্বপ্ন নিয়ে, কাঁধে একটা ঝোলা নিয়ে রওয়ানা হয়েছিলেন জীবনের পথে— এর পর সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। ইতিহাসের পাতায় মৃণাল সেন নামটি উজ্জ্বল হয়ে আছে ও থাকবে। আর সত্যজিতের পরে মৃনাল ও ঋত্বিক, বা ঋত্বিক ও মৃণাল শব্দটি সবসময় এক সঙ্গে উচ্চারিত হয়।” এই চিঠিতে সুরমা ঘটক লেখেন, কীভাবে ঋত্বিকের মৃত্যুর পর মৃণাল সেন ও তাঁর স্ত্রী পাশে ছিলেন। এমনকী শ্মশান থেকে মৃণাল সেন হাত ধরে টেনে নিয়ে আসেন সুরমা ঘটককে।  চাকরির ক্ষেত্রেও মৃণাল সেনকে ধন্যবাদ জানান সুরমা ঘটক। এই চিঠি সামনে আসতেই বহু মানুষ শেয়ার করেছেন। কুণাল সেনের পোস্টে পরিচালক অপর্ণা সেন লেখেন, “যত্ন করে রেখে দিও কুণাল! এই চিঠি অমূল্য। একটা যুগের চিত্র তুলে ধরছে।”

Published by:Piya Banerjee

First published:

Tags: Kunal sen, Mrinal Sen, Ritwik Ghatak

Advertisement

Malek

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।