হেরোইনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে উত্তরবঙ্গ, গোপনে কাজ করছে ‘‌লেডি গ্যাং’‌

Advertisement

উত্তরবঙ্গ থেকে হেরোইন ছড়িয়ে পড়ছে রাজ্যের বাকি অংশে। এখানে বহু যুবতী এখন হেরোইন পাচারের কাজে নেমেছে। এই গোটা টিমকে বলা হচ্ছে ‘‌লেডি গ্যাং’। দেখে বোঝার উপায় নেই এরা মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত। আর এই গোটা পাচার কাজে একটি চক্র সক্রিয়। যারা যুবতীদের হাতে এনে দিচ্ছে হেরোইন। এমনই একজন যুবতীকে ফোনে কথা বলতে শোনা গেল।‌ ফর্সা, কায়দা করা লম্বা চুল। পরনে জিন্স–টপ। এক যুবককে ফোন করে ওই যুবতী বলল, ‘সামান কে লিয়ে আয়া…।’ এই ফোনের পরই মাটিগাড়ার পরিবহণনগরে হাজির হল এক যুবক। তারপর কিছুটা দূরে গাছতলায় গেল তারা। আর অন্তর্বাসে কিছু একটা গুঁজে জাতীয় সড়কের দিকে এগিয়ে গেল যুবতী। আর যুবক ফিরে গেল।

বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে?‌ এই দৃশ্যটির সাক্ষী এক চা–বিক্রেতা। যাকে জিজ্ঞাসা করতেই প্রথমে কিছু বলতে চাননি তিনি। পরে মুচকি হেসে বললেন, ‘এটা সোনার চেয়েও বেশি দামি সামান। বুকে গুঁজে এক গ্রাম নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে পারলেই তরুণী পাবে কড়কড়ে ৩০০০ টাকা।’ কারণ এই ‘সামান’ হল ব্রাউন সুগার। মাটিগাড়ার খাপরাইল মোড়, পাথরঘাটা, সুটকি কলোনি, বিশ্বাস কলোনিতে এভাবেই লেডি গ্যাং কাজ করছে মাদক পাচারের কাজে। আর এসবের ক্রেতাও তাদের জানা। তাই তাদের কাছ থেকে অর্ডার পেলেই ‘‌সামান’‌ সাপ্লাই করা হয়।

তারপর ঠিক কী ঘটছে?‌ মাদকের রমরমা কারবারে মহিলাদের ভিড় বেড়েছে। মাদক পাচার থেকে বিক্রি—সবই করছেন সুন্দরী যুবতীরা। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক গৃহবধূ বলেন, ‘কয়েক মাস আগে ‘‌সামান’‌ পাচারের অভিযোগে পুলিশ স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে ছাড়ানোর জন্য উকিলবাবুরা প্রচুর টাকা চাইছেন। যা দেওয়া কঠিন। পুলিশও বাড়িতে আসছে। ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার চালাতে তাই সামান বিক্রি ছাড়া উপায় নেই।’ এখানের অনেক যুবতী ও গৃহবধূ এই কাজে জড়িয়ে বলেও জানান ওই গৃহবধূ।

আর কী জানা যাচ্ছে?‌ একগ্রাম হেরোইন বিক্রি করলেই ৩ হাজার টাকা পাওয়া যায়। আর ১০০ গ্রাম বিক্রি করতে পারলে লাখের উপর রোজগার। এই হেরোইন পাচারের ঠেক এনজেপি, প্রধাননগর, ভক্তিনগর, নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি এলাকাতেও আছে। মহিলাদের নিজস্ব গ্যাং কাজ করে চলেছে। দার্জিলিং পাহাড়েও সাপ্লাই করে তারা। খাবারের প্যাকেট, স্যানিটারি ন্যাপকিন, দুধের প্যাকেটে লুকিয়ে। মেলে মোটা টাকা কমিশন। ব্রাউন সুগারের কোড–নেম ‘পাতা’। আর পাসওয়ার্ড ‘চিরকুট’। তবে এসবের নেপথ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদের মাদক মাফিয়ারা। মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ, লালগোলা, নদিয়ার করিমগঞ্জ, মালদার কালিয়াচক, বৈষ্ণবনগর, গাজোল–সহ নানা এলাকা থেকে সড়ক পথে হেরোইন এখানে আসছে। মণিপুর থেকে পোস্ত ফলের আঠা ট্রেনে যায় মালদা–মুর্শিদাবাদে। সেখানেই রাসায়নিক মিশিয়ে প্রস্তুত হয় হেরোইন ও ব্রাউন সুগার। তারপর তা শিলিগুড়ি হয়ে পাচার হয় দার্জিলিং, কালিম্পং, সিকিম ও নেপালে। কাজটি করে লেডি গ্যাং বলে সূত্রের খবর।

Advertisement

Malek

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।