জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের অধীনে সাংসদপদ খুঁইয়েছেন রাহুল গান্ধী। তবে সেই আইনের ৮(৩) ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হল মামলা। প্রসঙ্গত, এই ধারায় বলা হয়েছে, কোনও সাংসদ বা বিধায়ক যদি দু’বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর পদ খারিজ হয়ে যাবে। এই নিয়মেই রাহুলের সাংসদপদ খারিজ করেছে লোকসভার সচিবালয়। প্রসঙ্গত, এর আগে ইউপিএ সরকার একটি অধ্যাদেশ এনে কারাদণ্ডে দণ্ডিত জনপ্রতিনিধিদের নিজেদের নির্দোষ প্রমাণিত করার জন্য তিন মাস সময় দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। তবে রাহুল গান্ধী সেই অধ্যাদেশ ছিঁড়ে নিজের দলেরই বিরোধিতা করেছিলেন। পরে তাঁর চাপে সেই অধ্যাদেশ ফিরিয়ে নিয়েছিল ইউপিএ সরকার। এখন সেই আইনেই রাহুল গান্ধী নিজে সাংসদপদ হারালেন। (আরও পড়ুন: রাজ্যে ডিএ আন্দোলনকারীদের দমাতে এ কী করছে সরকার! হতবাক সব মহল)
রাহুল গান্ধীর সাংসদপদ খারিজ হওয়ার জেরে গোটা দেশের বিরোধীরা বিজেপিকে তোপ দাগতে শুরু করেছে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, এই পরিস্থিতিতে তারা দমে যাবে না। বরং নতুন ভাবে রাজনৈতিক এবং আইনি ভাবে লড়াই করবে তারা। আর এরই মধ্যে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(৩) ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দায়ের হল মামলা। আবেদনকারীর দাবি, এভাবে কোনও অভিযুক্ত দোষী সাব্যস্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁর পদ খারিজ করে দেওয়া সাংবিধানির ভাবে বেআইনি। জানা গিয়েছে, আবেদনকারী একজন পিএইচডি পড়ুয়া।
আরও পড়ুন: নববর্ষে দ্বিতীয় বন্দে ভারত পাবে বাংলা, রেলমন্ত্রীর কাছে বিশেষ আবেদন BJP সাংসদের
উল্লেখ্য, গতপরশু গুজরাটের আদালত রাহুল গান্ধী দুই বছরের কারাদণ্ডের সাজা শোনায়। এরপরই রাহুলের সাংসদপদ খারিজ নিয়ে জল্পনা চলছিল। এরপরই গতকাল লোকসভার সচিবালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে কংগ্রেস নেতার সাংসদপদ খারিজের কথা জানানো হয়। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিককালে একাধিকবার রাহুল গান্ধীর সাংসদপদ খারিজের দাবি তুলে এসেছিল বিজেপি। সংসদে আদানি-হিন্ডেনবার্গ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং গৌতম আদানির ছবি দেখানোর জন্যেই হোক, কিংবা লন্ডনে ভারতীয় গণতন্ত্র নিয়ে বিতর্কিত সব মন্তব্য করার জন্যই… বারবার রাহুলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার জন্য সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির। তবে অবশেষে ২০১৯ সালের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাংসদপদ হারালেন রাহুল।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ শানিয়ে রাহুল বলেছিলেন, ‘সব মোদীরা কেন চোর হয়?’ তিনি নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে, নীরব মোদী, ললিত মোদীকে বোঝাতে এই মন্তব্য করেছিলেন। তবে এতে ‘মোদী’ পদবীর সকলের অপমান হয়েছে বলে অবিযোগ ওঠে। এই মর্মে সুরাটের এক আদালতে রাহুল গান্ধীর নামে মামলা হয়েছিল। সেই মামলারই রায়দান করে আদালতের তরফে জানানো হয়, রাহুল গান্ধী দোষী। এদিকে আইন অনুযায়ী, কোনও জনপ্রতিনিধি যদি দুই বা তার অধিক বছরের জন্য কারাদণ্ডের সাজায় দণ্ডির হন, তবে তৎক্ষণাত তাঁর পদ খারিজ হবে। এই আবহে রাহুল গান্ধীর সাংসদপদ খারিজ হয় আজ। এদিকে রাহুল দায়রা আদালতের এই নির্দেশিকার বিরুদ্ধে সরাসরি হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবেন না, কারণ এটা ফৌজদারী মামলা ছিল। তবে বৃহত্তর জনস্বার্থের কথা উল্লেখ করে কংগ্রেস গুজরাট হাই কোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারে।