বন্দে ভারতের জন্য রাজি করাতে রেল চেয়ারম্যানের পায়ে পড়েছিলাম, দাবি মূল কারিগরের

Advertisement

‘বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’ যে রেলের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু আধুনিক ভারতীয় রেলের এই মুখের পিছনে যিনি ছিলেন, তাঁকে ক’জন চেনেন?

বন্দে ভারতের মূলে ছিলেন সুধাংশু মণি। ৩৮ বছরের দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এক অবসরপ্রাপ্ত মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার। ভারতের প্রথম আধুনিক সেমি-হাই স্পিড ট্রেনের পিছনে হাত ছিল তাঁরই।

ইন্টিগ্রেটেড কোচ ফ্যাক্টরির প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন তিনি। তাঁর অধীনেই ‘ট্রেন এইট্টিন’ কোড নেমে বন্দে ভারতের প্রোটোটাইপ তৈরি করা হয়েছিল। তিনিই প্রয়োজনীয় অনুমোদন জোগাড় করে এনেছিলেন। গোটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিলেন এই দুঁদে ইঞ্জিনিয়ার। আরও পড়ুন: Vande Bharat Success: ৫ বন্দে ভারতে গড়ে ১০০% যাত্রী! স্বপ্ন সফল মোদীর

তাঁর সবচেয়ে বড় সাফল্য কী জানেন? বিদেশ থেকেও এই ধরনের ট্রেন আমদানি করাতে পারত ভারত। কিন্তু তাতে যা খরচ হত, তার তুলনায় মাত্র এক-তৃতীয়াংশ খরচেই এই অসাধ্য সাধন করেছেন ভারতীয় ইঞ্জিনিয়াররা। এত কম টাকাতেও যে অত্যাধুনিক ট্রেন তৈরি করা যায়, তা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করল ভারত।

দৈনিক ভাস্করকে দেওয়া এক সাম্প্রতিক সাক্ষাত্কারে সুধাংশু মণি তাঁর বন্দে ভারতের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি জানান, বন্দে ভারত এক্সপ্রেস প্রকল্প চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে তাঁকে এক অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। হাসিমুখে তিনি বলেন, ‘যখন রেল মন্ত্রকের কাছে গিয়ে আমরা বললাম যে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ খরচেই বিশ্বমানের ট্রেন তৈরি করব, তখন তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। অনেকে ভেবেছিলেন এসব বলে আমরা খালি একটু প্রচার পেতে চাইছি হয়তো।’

‘সবাইকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে ক্লান্ত হয়ে, শেষ পর্যন্ত আমি রেল বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যানের কাছে যাই। তাঁকেই সরাসরি ট্রেন 18-এর পিচ করি,’ বলেন তিনি।

এরপরেই নিজের ‘দুষ্টুমি’র কথাও বলেন সুধাংশু। তিনি জানান, ‘এই কাজ করতে গিয়ে একটু মিথ্যা বলতে হয়েছিল। সেই সময়ের ১৪ মাসের মধ্যেই চেয়ারম্যানের অবসরের কথা ছিল। আমরা বলেছিলাম, ট্রেনটি তাঁর অবসর গ্রহণের আগেই প্রস্তুত হয়ে যাবে। তিনিই নিজে হাতে এর উদ্বোধন করবেন। যদিও আমরা ভাল করেই জানতাম যে এত অল্প সময়ে এই কাজটি শেষ করা সম্ভব নয়।’ তবে এত কিছু করেও তাঁকে অনুমতি দেননি রেলের চেয়ারম্যান।

এদিকে সুধাংশু মণিও নাছোরবান্দা। তিনি জানান, সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে চেয়ারম্যানের পা ধরে ফেলেন তিনি। সাফ জানিয়ে দেন, তাঁকে এই প্রকল্পের অনুমতি দেওয়া হলে তবেই তিনি পা ছাড়বেন।

এত কাণ্ডের পর মন গলে রেল কর্তাদের। ট্রেন তৈরির অনুমোদন দিয়ে দেন তাঁরা। অনুমোদন পেতেই সঙ্গে সঙ্গে পুরো টিম মিলে কাজ শুরু করে দেয়। সেই সময়ে অবশ্য বন্দে ভারত নামটা ঠিক হয়নি। পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ট্রেন 18’।

এমন নাম কেন? আসলে এই জাতীয় একটি ট্রেন নকশা থেকে বাস্তবায়িত করতে উন্নত দেশেও ৩ বছর সময় লেগে যায়। সেখানে ভারতে মাত্র ১৮ মাসেই তা তৈরি করা হয়েছে। সেই কারণেই এহেন নাম প্রকল্পের। পরে অবশ্য ট্রেনটির নামকরণ করা হয় ‘বন্দে ভারত’।

সুধাংশু মণি যতদিনে ICF থেকে অবসর নেন, ততদিনে দু’টি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সুধাংশুর আশা, আগামী ৪-৫ বছরে ভারতের রেলপথে ৩০০টি বন্দে ভারত ট্রেন চলবে। ইতিমধ্যেই স্লিপার ক্লাসের তোরজোড় শুরু হয়েছে। সেটি হলেই শতাব্দী, রাজধানীর মতো পুরনো ট্রেনগুলির বদলে বন্দে ভারত চালু হতে পারে।

বন্দে ভারতের সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। কিন্তু সব রুটে সেই গতি তোলা সম্ভব নয়। লাইনে বেশি বাঁক, স্টপেজ, বেড়াহীন রেলপথ ইত্যাদি কারণে এখনও সীমিত গতিতেই চলছে বন্দে ভারত। সময়ের সঙ্গে এই পরিকাঠামোগুলির উন্নতিতে নজর দিয়েছে রেল। আরও পড়ুন: পুরনো শতাব্দীর বদলে চলবে বন্দে ভারত! স্লিপার ক্লাস নিয়ে বড় পরিকল্পনা রেলের

এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup

Advertisement

Malek

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।