‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবিতে ‘ভুল তথ্য’ দেখানো হয়েছে এমনই অভিযোগ নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের। শুক্রবার দেশজুড়ে মুক্তি পেয়েছে রানি মুখোপাধ্যায়ের ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’। মুক্তির আগের দিন ছবির স্পেশ্য়াল স্ক্রিনিং-এর আয়োজন করা হয়েছিল নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের জন্য। সেই ছবি দেখে খচে লাল নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হ্যান্স জেকব ফ্রাইডেনলুন্ড। এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন নরওয়ের এই কূটনীতিবিদ।
একটা গোটা দেশের বিরুদ্ধে এক মায়ের এই লড়াই উঠে এসেছে রানি মুখোপাধ্যায়ের ‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’-তে। তবে এই কাহিনি কিন্তু কঠিন বাস্তব। শুধু বাস্তবের মিসেস চ্য়াটার্জির নাম দেবিকা নয়, সাগরিকা। এক দশক আগের কঠিন বাস্তব এই ছবিতে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন অসীমা ছিব্বর। নরওয়েতে সংসার পেতেছিলেন বাঙালি দম্পতি সাগরিকা চট্টোপাধ্যায় এবং অনুরূপ ভট্টাচার্য। দুই সন্তানকে নিয়ে ছিল তাঁদের সুখী সংসার। তবে সাগরিকার থেকে নরওয়ে সরকার ছিনিয়ে নিয়েছিল তাঁর দুই সন্তান অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যকে। সেই হৃদয়বিদারক কাহিনি এই ছবির প্রেক্ষাপট। অথচ সেই গল্প পর্দায় দেখে তাঁকে ‘ভুল তথ্যে ভরা’ বলে উল্লেখ করেন নরওয়ের রাষ্ট্রদূত। পালটা জবাব ছবির নির্মাতা নিখিল আডবানির। তিনি এমনটাও বলেন, স্ক্রিনিং শেষে টিমের দুই মহিলা সদস্যকে উনি ‘হুমকি দিয়েছেন। যদিনও নিখিলের কথায় স্পষ্ট নয়, তাঁদের মধ্যে একজন ছবির পরিচালক আসীমা ছিব্বর কিনা।
নিখিল টুইটারে লেখেন, ‘অতিথি দেব ভব! এটা আমাদের ভারতীয় সংস্কৃতি। আমাদের বড়রা এটা শিখিয়েই আমাদের বড় করেছেন। গত সন্ধ্যায় আমরা নরওয়েজিয়ান দূতের জন্য স্বেচ্ছায় মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ের স্ক্রিনিং-এর ব্যবস্থা করেছিলাম। স্ক্রিনিং শেষে দেখলাম, উনি দুই সাহসী মহিলাকে ভয় দেখাচ্ছেন যাঁরা এই গল্পটা বলার সাহস দেখিয়েছে। আমি চুপ ছিলাম, কারণ ঠিক সাগররিকা চক্রবর্তীর মতোই ওদের আমাকে দরদার ছিল না, পাশাপাশি সাংস্কৃতিগতভাবে অতিথিদের ডেকে অপমান করার শিক্ষা আমরা পাই না।’
এরপর নিখিল নিজের টুইটে সাগরিকা চট্টোপাধ্যায় অর্থাৎ বাস্তবের মিসেস চ্যাটার্জির একটি ভিডিয়ো জুড়ে দেন। সেখানে সাগরিকাকে বলতে শোনা গেল,’ আমি নরওয়ের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছি। আমার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যাচার ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। এত বছর পরও নরওয়ে সরকার আমার কাছে ক্ষমা পর্যন্ত চায়নি। তারা আমার জীবন নষ্ট করেছে, আমার সম্মান নষ্ট করেছে। আমার সন্তানরা এখনও ওই ঘটনার স্মৃতি আজ এত বছর পরেও বয়ে বেড়াচ্ছে। তবে ওই সময় ভারত সরকারই আমাকে অনেক সাহায্য করেছিল, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ’।
শুক্রবার টুইটারে নিজের মতামত শেয়ার করে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত জানান, ‘এই ছবিটি একেবার ভুল তথ্যে ভরা। নরওয়ের নাগরিক হিসাবে আমার এই বিষয়টা পরিষ্কার করে দেওয়া কর্তব্য যে এই ছবিটিতে তথ্যগত ভুল রয়েছে। এই ছবিতে দুই দেশের সাংস্কৃতিক পার্থক্য দেখানো হয়েছে, সে়টাও সম্পূর্ণ সত্য নয়।’
নরওয়ের রাষ্ট্রদূত বলছেন, ‘বিভিন্ন সংস্কৃতির জন্য আমাদের যে সম্মান রয়েছে তা নষ্ট হয়েছে।’ তিনি জানান, ‘শিশুর সুরক্ষা একটি বড় দায়িত্বের বিষয়, সেটি কখনওই লাভ বা পেমেন্ট দিয়ে বোঝানো যায় না।’ তাঁর সংযোজন- ‘মা তাঁর সন্তানকে হাত দিয়ে খাওয়াবে কিংবা এক বিছানায় বাচ্চার সঙ্গে শোবে বলে রাষ্ট্র সন্তানকে মায়ের কোল ছাড়া করবে, এটা কোনও দেশেই হয় না। এই ছবিটি দেখে অস্বস্তি হচ্ছিল। আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে আমার ভারতীয় বন্ধুরা আমাদের সম্পর্কে ভুল ধারণার শিকার হবে। ভাববে, নরওয়ের বাসিন্দরা কঠোর, যাঁদের হৃদয় নেই। যা একদম অসত্য’।