স্বপ্ন ছিল অভিনেত্রী হওয়ার৷ তাঁর নিজের জীবনসংগ্রাম যে হার মানাবে সিনেমার চিত্রনাট্যকেও, সেটা দুঃস্বপ্নের কষ্ট কল্পনাতেও ভাবতে পারেননি ঐন্দ্রিলা শর্মা৷ তবে জীবন ও পারিপার্শ্বিক যত তাঁর দিকে আঘাতের পাথর ছুঁড়েছে, তিনি সে সব কুড়িয়ে লড়াইয়ের ইমারত তৈরি করেছেন৷ বার বার প্রমাণ করেছেন, এভাবেও ফিরে আসা যায়৷
চিকিৎসক বাবা এবং নার্সিং হস্টেলের ইনচার্জ মায়ের মেয়ে হিসেবে নিভৃত সাংসারিক ছায়ায় কাটছিল ঐন্দ্রিলার জীবন৷ তাঁর বড় হয়ে ওঠার শহর মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে৷ নির্বিঘ্ন ও নিস্তরঙ্গ জীবনের ছন্দোপতন হয় ২০১৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি৷ সেটা ছিল ঐন্দ্রিলার সপ্তদশী হয়ে ওঠার দিন৷ জন্মদিনেই কিশোরী জানতে পারলেন তাঁর অস্থিমজ্জায় জাল ছড়িয়েছে কর্কটরোগ! এর পর থেকেই তিনি অনুভব করেন বয়স নয়, আসলে মানুষকে অভিজ্ঞ করে তোলে জীবন জুড়ে পাওয়া আঘাত ও প্রত্যাখান৷
হার না মানা জেদ নিয়ে লড়াই শুরু হল একাদশ শ্রেণীর পড়ুয়া ঐন্দ্রিলার৷ চিকিৎসার প্রথম পর্বে তিন দিনে ষাটটা ইঞ্জেকশন নিতে হয়েছিল তাঁকে৷ শেষ দিকে সূচবিদ্ধ হওয়ার সংখ্যা গোনাও ছেড়ে দিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা৷ ইন্টারনেটে ‘জোশ টকস-এ’ নিজের বক্তব্যে দর্শক শ্রোতাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন যন্ত্রণা৷ বলেছেন ইঞ্জেকশনের যন্ত্রণার থেকেও তাঁকে বেশি কষ্ট দিয়েছিল কিছু আচরণ৷ বাবা মা-সহ নিজের লোকেরা তো ভরসার জায়গা ছিলেনই৷ কিন্তু অন্যদিকে এরকমও হয়েছে বাড়িতে ঢুকতে চায়নি সে সময়ের প্রিয় বন্ধু৷ পরিজনের নবজাতককে কোলে নিতে গিয়ে প্রশ্ন ও দ্বিধার মুখে পড়তে হয়েছে৷ যদি ঐন্দ্রিলার থেকে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ে! ক্ষত বিক্ষত করে দিত লোকের দৃষ্টিও৷ যখন চিকিৎসাবিকৃত চেহারা নিয়ে ঐন্দ্রিলা রাস্তায় বার হতেন৷
আরও পড়ুন : গোপন কথাটি অবশেষে প্রকাশ্যে! এই তরুণ অভিনেতাই নাকি অমিতাভ-জয়ার হবু নাতজামাই
টানা দেড় বছর চিকিৎসা চলেছে তাঁর৷ কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের বন্ধুর পথ পেরিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠেন ২০১৫ সালে৷ তার পর জানতে পারেন চিকিৎসা শুরু হওয়ার সময় দিল্লির চিকিৎসকরা বলেছিলেন তাঁর আয়ুষ্কাল আর ৬ মাস৷ সেই আশঙ্কা খণ্ডন করে ঐন্দ্রিলা শুধু ফিরেই এলেন না, একটু একটু করে এগোলেন স্বপ্নপূরণের পথেও৷ ২০১৭ সালে তাঁর প্রথম অভিনয় ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকে৷ এর পর জনপ্রিয়তা পান ‘জিয়নকাঠি’ ধারাবাহিকেও৷
লাইট সাউন্ড ক্যামেরার দুনিয়া বেশ কাটছিল দিনগুলো৷ কাজের সূত্রে পেয়েছিলেন সব্যসাচী চৌধুরীকেও৷ যাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব ক্রমশ রূপান্তরিত হয় প্রেমে৷ কিন্তু আবার এলোমেলো হয়ে গেল সবকিছু৷ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি জানতে পারলেন ডান ফুসফুসে ১৯ সেমি লম্বা টিউমার হয়ে আছে৷ এ বার আর চিকিৎসাই করাতে চাননি ঐন্দ্রিলা৷ কিন্তু রাজি হলেন বাড়ির লোক ও প্রেমিক সব্যসাচীর কথায়৷
কেমো পর্বের পর অস্ত্রোপচারের পালা৷ ঐন্দ্রিলা জানতেন যথেষ্ট ঝুঁকি আছে৷ কিন্তু বহু স্বপ্ন নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন৷ সে সব ঝরে পড়তে দিতে চাননি৷ ফিরে আসতে না পারেন জেনেও সম্মত হয়েছিলেন অস্ত্রোপচারে৷ এর পর বহু কষ্ট, যন্ত্রণা সহ্য করে তিনি ফিরে এসেছিলেন নিজের জীবনের চলার পথে৷ জি বাংলার অরিজিনাল ছবি ‘ভোলে বাবা পার করেগা’, ওয়েব সিরিজ ‘ভাগাড়’-এও তাঁর কাজ রয়েছে দর্শকদের মনের মণিকোঠায়৷
আরও পড়ুন : মূল্য ৭৮ মিলিয়ন ডলার! নিজের জন্য নতুন বিমান অর্ডার করলেন ধনকুবের এলন মাস্ক
শোনা যাচ্ছে শ্যুটিংয়ের সূত্রে সম্প্রতি গোয়া যাওয়ার কথা ছিল তাঁর৷ কিন্তু জীবন আবার তাঁকে দাঁড় করিয়ে দিল মৃত্যুর মুখোমুখি৷ হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালে স্ট্রোকে আক্রান্ত অভিনেত্রীর চিকিৎসা চলছে ভেন্টিলেশনে৷ তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক৷ তবে তার শরীরের অন্যান্য ভাইটালস স্বাভাবিক রয়েছে ৷ মঙ্গলবার রাতে ভর্তি করানোর পর তাঁর দুরুহ জটিল ক্রেনিওটমি অস্ত্রোপচার করা হয়
৷ এই অস্ত্রোপচারে স্কালের থেকে একটি হাড়ের অংশবিশেষ বার করা হয় মস্তিষ্ক ওপেন করে দেখার জন্য৷ তাঁর শরীরের ডান দিক প্রায় অসাড়৷ কিন্তু সব অসাড়তা কাটিয়ে ঐন্দ্রিলাই বার বার শিখিয়েছেন ফিরে আসার বীজমন্ত্র৷ সংগ্রাম শুরুর দিন থেকেই তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Aindrila Sharma, Sabyasachi Chowdhury